ঘরে বসেই অনলাইন থেকে ইনকাম শুরু করবেন যেভাবে

বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের কল্যাণে মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। আপনি একটি দিনও ইন্টারনেট ছাড়া চিন্তা করতে পারবেন না। ইন্টারনেট আমাদের জীবনে অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেট আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রুতভাবে জড়িত। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা যা সেবা পেয়ে থাকি সেটি কিন্তু বিনামূল্যে নয়। এই সেবার জন্য আমাদের মূল্য পরিশোধ করতে হয়। কেমন হয় যদি এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে শুধু ব্যয় না করে কিছু আয়ও করা যায়? নিশ্চয়ই এটি খুবই ভালো হয় বিশেষ করে আমরা যারা ছাত্র ছাত্রী আছি তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি ইন্টারনেট থেকে যদি কিছু আয় সম্ভব হয়। আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা তেমনি কিছু মাধ্যম এবং বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যার মাধ্যমে নিজের দক্ষতা ব্যবহার করে অনলাইন ভিত্তিক আর্নিং এর জন্য জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।

{tocify} $title={Table of Contents}

অনলাইন আর্নিং মূলত কি?

অনলাইন আর্নিং হল ইন্টারনেটে ব্যবহার এর মাধ্যমে হাতে টাকা স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটারের মাধ্যমে আয় করা। অনলাইন থেকে আয় শুরু করার জন্য আপনাকে প্রথমেই দক্ষতা অর্জন করতে হবে বিষয়মূলক ভিত্তিতে। অনলাইন থেকে আয়ের একটি বিশেষ সুবিধা হল যে কোন জায়গা থেকে যেকোনো সময়ে মুক্তভাবে এর কাজ করতে পারবেন এবং সব সময় আয় হতে থাকবে। চলুন জেনে নেয়া যাক ইন্টারনেট থেকে আয়ের কয়েকটি মাধ্যম এবং দক্ষতা।

  • ফ্রিল্যান্সিং 
  • ব্লগিং
  • ইউটিউবিং 
  • ই কমার্স 
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং 
  • ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রয়

ফ্রিল্যান্সিং 

ফ্রিল্যান্সিং হল যে কোন একটা বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করে সেই দক্ষতার মাধ্যমে অন্যকে সেবা প্রদান করে তার বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করা বা আয় করা। ধরুন আপনি ঘর বানানোর কাজ করতে পারেন। এখন আপনি একজন লোকের ঘর বানিয়ে দেয়ার বিনিময়ে তার কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করবেন যেটা আপনাকে সে পারিশ্রমিক হিসেবে দিবে। ঠিক তেমনি ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক একটি দক্ষতা যার বিনিময়ে আপনি অন্যকে সেবা দিয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করবেন। ফ্রিল্যান্সিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে আয় করতে হলে আপনাকে অবশ্যই যে কোন একটা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ইন্টারনেটে অনেকগুলি প্ল্যাটফর্ম আছে যেসব প্ল্যাটফর্মে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে লক্ষ্য লক্ষ্য ফ্রিল্যান্সাররা ডলার আয় করছে। নিচ্ছে কয়েকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম দেয়া হলঃ

  1. Freelancer
  2. Fiverr
  3. Upwork
  4. Workupjob
  5. dealancer - এটি বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম

ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আর শুরু করার জন্য প্রথমেই যেকোন ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে একাউন্ট তৈরি করতে হবে। সেখানে আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়ের বিবরণ উল্লেখ করতে হবে। আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে যাদের কাজ প্রয়োজন তারা আপনাকে এসে কাজ দিবে এবং আপনি সে কাজ দক্ষতার সহিত সম্পন্ন করে দেওয়ার মাধ্যমে আপনার পারিশ্রমিক পাবেন। তাই আজই যে কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দিন।

যেসব ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতা বর্তমানে জনপ্রিয় সেগুলো হচ্ছে: 

১. ওয়েব ডিজাইন ২. গ্রাফিক্স ডিজাইন ৩. কন্টেন্ট রাইটিং ৪. ডিজিটাল মার্কেটিং ৫. সাইবার সিকিউরিটি 

এইসব দক্ষতা অর্জন করতে পারলেই অনলাইন থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করা সম্ভব।

ব্লগিং ওয়েব সাইটের মাধ্যমে আয়

বর্তমান সময়ে ওয়েব সাইট ব্লগিং দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেকেই এই ব্লগিং শখের বসে করে আবার অনেকেই ব্লগিং আয়ের উৎস হিসাবে করে। আমরা এটিকে আয় করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করব। ব্লগ হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আপনি আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ারের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। এই যেমন আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আমার ব্লগটি পরতেছেন।

যেভাবে ব্লগিং শুরু করবেন 

ব্লগিং শুরু করার জন্য প্রথমেই আপনাকে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। আপনি কি নিয়ে লিখবেন, কোন বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা ভালো যার মাধ্যমে পাঠক আপনাকে পড়তে আসবে। তারপর ব্লগিং শুরু করার জন্য আপনাকে অবশ্য একটি প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজন সেটা হচ্ছে কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS) যার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্লগিং কন্ট্রোল করতে পারবেন। জনপ্রিয় দুটি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হচ্ছে ব্লগার এবং ওয়ার্ডপ্রেস। আমি সাজেস্ট করব নতুন অবস্থায় ব্লগারের মাধ্যমে শুরু করার জন্য কারণ এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শুরু করা যায়। শুরু করার জন্য আপনাকে প্রথমেই আপনার ওয়েবসাইট একটি নাম নির্ধারণ করতে হবে এবং ওয়েবসাইটটি সাজিয়ে গুছিয়ে কাস্টমাইজ করে ইউজার ফ্রেন্ডলি করে তুলতে হবে। যাতে কোন পাঠক এসে আপনার ব্লগটি পড়তে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।  এবং এসইও ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল লেখা শুরু করুন।

আয় হবে যেভাবে 

নিশ্চয়ই আপনার মনে এতক্ষণে এই চিন্তাটি ঘুর পাক খাচ্ছে যে কিভাবে আয় করব ? কিভাবে আয় শুরু হবে? 
ব্লগিংয়ের মাধ্যমে আয় করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে গুগল এডসেন্স - Google AdSense
গুগল এডসেন্সের নীতিমালা অনুসরণ করে এপ্লাই করার মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে এড শো করে আয় শুরু করতে পারবেন। তাছাড়া  অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এবং প্রোডাক্ট বিক্রয় এর মাধ্যমেও আয় করা সম্ভব ।

ইউটিউব থেকে আয়

আমরা অনেকেই সখের বসে অনেক ধরনের ভিডিও তৈরি করে থাকি। কতই না ভালো হয় যদি আপনার সেই শখের কারণটি আয়ের উৎস হিসেবে গড়ে উঠে। ইউটিউব আপনাকে সেই সুযোগটি দিয়েছে। সারা পৃথিবীতে কোটি-কোটি লোকজন ইউটিউবের মাধ্যমে আয় করছে। আপনি যে কোন একটা বিষয়ে দক্ষতা ব্যবহার, সেটার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার মাধ্যমে ইউটিউব ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন। নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে ইউটিউব চ্যানেলটি মনিটাইজ করে আয় শুরু করতে পারবেন।

ই-কমার্স বিজনেস 

আপনার যদি কোন নিজস্ব পণ্য থেকে থাকে সেগুলো অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রয় করার মাধ্যমকে ই-কমার্স বলে। ই কমার্স ভার্চুয়াল দোকানের মত। যেখানে আপনি আপনার পণ্য সাজিয়ে সেটির সঠিক দাম নির্ধারণ করে রেখে দিবেন, কাস্টমার এসে সে দাম পরিশোধ করে সে প্রোডাক্টটি অর্ডার করে নিতে পারবে। ই-কমার্স সম্পর্কে আইডিয়া নেওয়ার জন্য আপনি জনপ্রিয় কিছু ই-কমার্স এর ওয়েবসাইটে ভিজিট করে আইডিয়া নিতে পারবেন। নিচে কিছু বড় বড় ই-কমার্স কোম্পানির নাম দেওয়া হল-
  • Amazon 
  • Walmart
  • Daraz
  • Rokomari

এই সকল ওয়েবসাইট থেকে ধারণা নিতে পারেন। ই-কমার্স বিজনেসে সফল হওয়ার জন্য মার্কেটিং সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। আপনার প্রোডাক্টটির প্রচারণা করতে হবে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং

ই-কমার্স এর মাধ্যমে কিভাবে নিজেদের প্রোডাক্ট বিক্রি করা যায় সেটি আমরা জানলাম। এখন আমরা জানবো এফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে কিভাবে অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রি করে কমিশন লাভ করা যায়। এটি একটি সুবিধা জনক এবং লাভজনক মাধ্যম অনলাইন থেকে আয় করার জন্য। এফিলিট মার্কেটিং করতে আপনার কোন ধরনের পণ্যের ঝামেলা, অর্ডার মেইন্টেন করা লাগবে না। শুধুমাত্র আপনার এফিলিয়েট রেফার লিংক এর মাধ্যমে অন্যের প্রোডাক্টে অর্ডার করিয়ে নিজের কমিশন বুঝে নিতে পারবেন। Amazon, clickbank এইসব কোম্পানি এফিলিয়েটের মাধ্যমে আয় করিয়ে থাকে। 

প্রথমেই এফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট করুন। তারপর প্রোডাক্টের এফিলিয়েট লিংক তৈরি করে শেয়ার করুন। এফিলিয়েট লিংক শেয়ার করার জন্য ব্লগিং, ইউটিউব এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন। 

ডিজিটাল প্রোডাক্ট কি? বিক্রয় করবেন যেভাবে 

যেকোনো পণ্য বা প্রোডাক্ট হলো সেটি যেটাকে আমরা হাত দিয়ে ছুয়ে দেখতে পারি। ডিজিটাল প্রোডাক্ট হলো  এমন একটি পণ্য যদি হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়না। সেই প্রোডাক্ট গুলো অনলাইন ভিত্তিক হয়ে থাকে। বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক সেবা প্রদান করার মাধ্যম হলো ডিজিটাল প্রোডাক্ট বিক্রি। যেমন: আপনার যদি একটি ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড থাকে তাহলে ফেসবুক বুষ্টিং, ইউটিউব প্রিমিয়াম ক্রয় করে দেওয়া, বিভিন্ন অ্যাপসের প্রিমিয়াম কিনে দেওয়ার মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। কারণ বাংলাদেশ থেকে অনেকের ডুয়েল কারেন্সি কার্ড না থাকায় অন্য কারোর মাধ্যমে সেগুলো ক্রয় করে থাকে। সেখান থেকে কমিশন রেখে আপনি টাকা চার্জ করে আয় করতে পারবেন।

বর্তমান আধুনিক যুগে অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার বিকল্প নেই। ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে বয়স্ক লোকেরা ও চাইলে অনলাইন থেকে আয় শুরু করতে পারে। যার জন্য প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছা, ধৈর্য শক্তি এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। জানুন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য মন ও শরীর সুস্থ রাখার সেরা টিপস।
উপরোক্ত মাধ্যম গুলো ব্যবহার করে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে অনলাইন থেকে আয় করতে আজই লেগে পড়ুন। মনে রাখবেন আয় করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে দক্ষতা অর্জন করে নিতে হবে। নিশ্চয়ই পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি।

Post a Comment

Previous Post Next Post